তুর্কি নাগরিক ও যুক্তরাষ্ট্রের টাফটস বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও পিএইচডি গবেষক রুমেইসা ওজতুর্ক জামিনে মুক্তি পেয়েছেন। গ্রেফতারের প্রায় ছয় সপ্তাহ পর স্থানীয় সময় গত শুক্রবার (৯ মে) এক বিচারক তাকে অবিলম্বে মুক্তির নির্দেশ দেন। এর কয়েক ঘণ্টা পর লুইজিয়ানার একটি অভিবাসী আটককেন্দ্র থেকে তাকে মুক্তি দেয়া হয়।মার্কিন আইনপ্রণেতাদের সঙ্গে তুর্কি নাগরিক ও যুক্তরাষ্ট্রের টাফটস বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও পিএইচডি গবেষক রুমেইসা মুক্তির পর আটককেন্দ্রের বাইরে জড়ো সমর্থক ও সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন রুমেইসা। উপস্থিত সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আপনাদের অনেক অনেক ধন্যবাদ। আমি একটু ক্লান্ত। এজন্য বিশ্রামের জন্য কিছু সময় নেব।
শুক্রবার (৯ মে) তার মুক্তির ব্যাপারে বিচারক উইলিয়াম সেশন্স বলেন, এই ছাত্রী মুক্তির জন্য প্রয়োজনীয় সকল শর্ত পূরণ করেছেন। পাশাপাশি তার বিরুদ্ধে সরকারের করা মামলার নিন্দাও জানান তিনি।তুরস্ক থেকে যুক্তরাষ্ট্রে আসা রুমেইসা ওজতুর্ক টাফটস বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্র্যাজুয়েট স্কুল অব আর্টস অ্যান্ড সায়েন্সেসের একজন পিএইচডি গবেষক। সম্প্রতি অন্য একজনের সঙ্গে মিলে ক্যাম্পাস পত্রিকায় মতামত কলাম প্রকাশ করেন তিনি। কলামটিতে গাজায় ইসরাইলের গণহত্যামূলক যুদ্ধের সমালোচনা ছিল।
সম্প্রতি মার্কিন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ‘ইহুদিবিদ্বেষ’ আখ্যা দিয়ে ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসন শিক্ষার্থীদের ওপর যে ধরপাকড় শুরু করে তারই ধারাবাহিকতায় রুমেইসাকে গ্রেফতার করা হয়। মানবাধিকার গোষ্ঠীগুলো তার জামিনের জন্য আবেদন জানালেও তা বারবার আটকে দেয়া হয়।
এ বিষয়টা নিয়েও কথা বলেন বিচারক। তিনি বলেন, ‘তাকে অব্যাহতভাবে আটক রাখা এই দেশের লক্ষ লক্ষ নাগরিকের কণ্ঠকে রোধ করেছে।’ জামিনে ছাড়া পাওয়ার পরদিন শনিবার (১০ মে) রুমেইসা বোস্টনে ফিরে আসেন। এদিন বিমানবন্দরে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘অত্যন্ত কঠিন একটি সময় অতিবাহিত করার পর লেখাপড়ায় ফিরে যেতে চাই।’
তিনি আরও বলেন, ‘গত ৪৫ দিনে আমার স্বাধীনতা ও শিক্ষা দুটিই হারিয়েছি আমি। তবে যারা আমাকে সমর্থন, সহায়তা কিংবা এই খারাপ সময়ে খোঁজ নিয়েছেন তাদের সবার প্রতি আমি কৃতজ্ঞ।’রুমেইসাকে গ্রেফতার করা হয় গত ২৫ মার্চ। ম্যাসাচুসেটসের সামারভিলে নিজের বাসা থেকে বের হওয়ার পরই রাস্তা থেকে তাকে গ্রেফতার অভিবাসন কর্মকর্তারা। স্বজনরা অভিযোগ করেন, তাকে অনেকটা ‘অপহরণের’ কায়দায় তুলে নেয়া হয়।তার গ্রেফতারের একটি ভিডিও প্রকাশ করে মার্কিন সংবাদমাধ্যম অ্যাসোসিয়েটস প্রেস (এপি)। তাতে দেখা যায়, মুখোশধারী সাদা পোশাকের একদল পুলিশ তাকে ঘিরে রেখেছে, তাকে হাতকড়া পরাচ্ছে এবং তারপর তাকে চিহ্নহীন একটি গাড়িতে তুলে নেয়া হচ্ছে। ভয়ে চিৎকার করছেন ওজতুর্ক।গ্রেফতারের পর তাকে নিউ হ্যাম্পশায়ার ও ভার্মন্টে নিয়ে যান ম্যাসাচুসেটসে ইমিগ্রেশন কর্মকর্তারা। পরে লুইজিয়ানার বাসিলের একটি আটক কেন্দ্রে পাঠানো হয় রুমেইসাকে। তার ভিসাও বাতিল করা হয়। তার আটকের পর দেশব্যাপী বিক্ষোভ শুরু হয়।
রুমেইসার বিরুদ্ধে মার্কিন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অভিযোগ, ‘তিনি হামাসের সমর্থনে নানা কর্মকাণ্ডে জড়িত। হামাস একটি বিদেশি সন্ত্রাসী সংগঠন যারা আমেরিকানদের হত্যা করতে পছন্দ করে।’ ওজতুর্ক তার আটকের বিরুদ্ধে মামলা করেন। মামলাটি ভার্মন্টের বার্লিংটনে ইউএস ডিস্ট্রিক্ট জজ উইলিয়াম সেশন্সের আদালতে বিচারাধীন।মামলায় রুমেইসা বলেন, গত বছর ইসরাইল ও গাজা যুদ্ধ সম্পর্কে তার বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিক্রিয়ার সমালোচনা করে আরেকজন লেখকের সঙ্গে মিলে একটি কলাম লেখেন তিনি। এ কারণেই তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এতে তার সাংবিধানিক অধিকার ও বাকস্বাধীনতার ভয়াবহ লঙ্ঘন হয়েছে।
রুমেইসার এই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে তার দাবির চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত না হওয়া পর্যন্ত তাকে জামিনে মুক্তি দেয়া হয়েছে। মুক্তির পর তুরস্কের এই শিক্ষার্থী জানান, তিনি আদালতে তার মামলা চালিয়ে যাবেন। আমেরিকার বিচার ব্যবস্থার ওপর তার ভরসা রয়েছে বলেও জানান তিনি।রুমেইসার জামিনের খবরে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন ম্যাসাচুসেটসের ডেমোক্রেটিক সিনেটর এড মার্কি। তিনি বলেন, ‘এই দিনটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমরা তোমাকে ফিরে পেয়ে আনন্দিত রুমেইসা। তোমার লড়াই আমাদের দেশের কোটি কোটি মানুষকে গর্বিত করেছে।’তবে বিচারকের রায়ের পর এক প্রতিক্রিয়ায় ডিএইচএসের একজন মুখপাত্র জানিয়েছেনম ‘বিদেশি শিক্ষার্থীদের যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস ও পড়াশোনার জন্য প্রদত্ত ভিসা কোনো অধিকার নয়, বরং একটা সুযোগ।’
ওই মুখপাত্র আরও বলেন, ‘ট্রাম্প প্রশাসন আমাদের অভিবাসন ব্যবস্থায় আইনের শাসন এবং সাধারণ বোধ পুনরুদ্ধারে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ এবং এই দেশে থাকার কোনো অধিকার নেই এমন বিদেশিদের গ্রেফতার, আটক ও অপসারণের জন্য লড়াই চালিয়ে যাবে।’